এফএনএস বিদেশ : দক্ষিণ কোরিয়ায় সামরিক আইন জারির দায়ে ইতোমধ্যে অভিশংসিত হয়েছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ইউন সুক-ইওল। কিন্তু তা সত্ত্বেও বাড়তে যাচ্ছে তার বার্ষিক বেতন। গতকাল সোমবার এ তথ্য জানিয়েছে বিবিসি। সরকারি কর্মকর্তাদের সাধারণ মানদণ্ড অনুযায়ী ইউনের বেতন তিন শতাংশ বেড়ে ২৬ কোটি ২৬ লাখ ওন (এক লাখ ৭৯ হাজার ডলার) হতে যাচ্ছে। ডিসেম্বরে অভিশংসিত হওয়ার পর থেকে ইউন তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রক্রিয়ায় বাধা দিচ্ছেন। অরাজক পরিস্থিতি সৃষ্টি ও ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ তুলে তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানাও জারি করা হয়েছে। কিন্তু তিনি পুলিশের কাছে ধরা দিচ্ছেন না। তাকে গ্রেফতারের বেশ কয়েকটি উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছে। প্রেসিডেন্টের দৈনন্দিন কার্যক্রম থেকে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হলেও দক্ষিণ কোরিয়ার সাংবিধানিক আদালতে অভিশংসনের অনুমোদন না আসা পর্যন্ত প্রেসিডেন্সিয়াল প্রাসাদেই থাকছেন তিনি। ইউন ‘রাষ্ট্রবিরোধী মহল’ ও উত্তর কোরিয়ার কাছ থেকে আসা হুমকির কথা উল্লেখ করে সামরিক আইন জারির পক্ষে যুক্তি দেন। তবে পরবর্তীতে জানা যায়, বাইরের শত্রুর হুমকি নয়, তার নিজের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সমস্যার কারণে তিনি এ উদ্যোগ নিয়েছিলেন। ইউনের বেতন বেড়ে যাওয়ার খবরে নেতিবাচক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার জনগণ। অনেকেই এই ‘পথভ্রষ্ট’ রাষ্ট্রনায়কের কড়া সমালোচনা করেছেন। অনেকে বিশ্বাসই করতে পারছেন না যে বরখাস্ত অবস্থাতেও তাকে বেতন দেওয়া হচ্ছে—বাড়ানোর বিষয়টা তো রীতিমত আপত্তিকর। সামাজিক মাধ্যমে অনেকে উল্লেখ করেন, ইউনের তিন শতাংশ বেতন বৃদ্ধি দেশটির ন্যূনতম বেতন বৃদ্ধির হারের প্রায় দ্বিগুণেরও বেশি। এক্সে হাজারো লাইক পাওয়া একটি পোস্টে এক ইউজার উল্লেখ করেন, ন্যূনতম বেতন এক দশমিক সাত শতাংশ বাড়ল আর তিনি (ইউন) পেলেন তিন শতাংশ বেতন-বৃদ্ধি। কোন যুক্তিতে এটা হলো? এ মাসের শুরুতে ইউনের ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকর্মীরা তদন্তকারীদের প্রেসিডেন্সিয়াল বাসভবনে প্রবেশ করতে দেয়নি। এই অচলাবস্থার মাঝে ৭ জানুয়ারি মধ্যরাতে গ্রেফতারি পরোয়ানার মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যায়। তবে পরবর্তীতে স্থানীয় আদালতে এই পরোয়ানার মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে। তদন্তকারীরা আবারও তাকে গ্রেফতারের উদ্যোগ নেবেন। এবার পুলিশের সহযোগিতা কামনা করেছেন তারা। গতকাল সোমবার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইউনকে গ্রেফতারের সময় কেউ যাতে হতাহত না হয় বা কোনো ধরনের রক্তপাত না ঘটে, সেটা নিশ্চিত করা হবে। তারা সতর্ক করেন, যদি কোনো নিরাপত্তা কর্মী বা আইনপ্রণেতা ইউনকে গ্রেফতারে বাধা দেন, তাহলে তাদেরকে গ্রেফতার করা হতে পারে। ইউনের আইনজীবীরা দাবি করেন, পুলিশ ও তদন্তকারীদের মাধ্যমে প্রেসিডেন্টকে গ্রেফতারের উদ্যোগ ‘জনগণের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা’। তারা আরও দাবি করেন, এই গ্রেফতারি পরোয়ানা ‘অবৈধ’। ইউনকে অভিশংসিত করার পর ভারপ্রাপ্ত প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব নেন হান ডাক-সু। তার বেতনও তিন শতাংশ বেড়ে ২০ কোটি ৪০ লাখ ওন (এক লাখ ৩৮ হাজার ডলার) হয়েছে।