-এবাদত আলী
পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য ও পাবনা মিডিয়া সেন্টারের সাংবাদিক বৃন্দের উদ্যোগে ফ্যামিলি ডে ও বনভোজনের জন্য স্থান নির্ধারণ করা হয় রাজশাহীর সারদাহে বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির পিকনিক স্পটে।
দিনটি ছিলো চৈত্র মাসের ২ তারিখ মোতাবেক ১৬ মার্চ-২০২৩ বৃহস্পতিবার। সাংবাদিকদের পরিবার পরিজনসহ ফ্যামিলি ডে উদযাপনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণকারি পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি আক্তারুজ্জামান আক্তার ও কামাল আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক সম্পাদক আাঁখিনুর ইসলাম রেমন, প্রেসক্লাব সদস্য জি কে সাদী, এস এম আলাউদ্দিন, তপু আহমেদসহ অন্যান্য সাংবাদিক বৃন্দের সঙ্গে আগেই কথা হয়েছিলো।
সেমতে এদিন সকাল নটার দিকে আমার টেবুনিয়ার বাসা থেকে টেবুনিয়া বাসষ্ট্যান্ডে গিয়ে আমি (এবাদত আলী),মনোহরপুর থেকে আগত সাংবাদিক ও নাট্যকার এইচ কে এম আবু বকর সিদ্দিক ও তার পরিবারসহ আমরা অপেক্ষা করতে থাকি। সময় সম্পর্কে বাঙালিদের ঐতিহ্যগতভাবেই মিনি মেরাথনে পিছিয়ে থাকার স্বভাব। এ ক্ষেত্রেই বা তার ব্যতিক্রম হবে কেন। অধিক বিলম্বে প্রহর অতিবাহিত হলেও আমরা ধৈর্য হারাইনি বা আয়োজকদেরকে দোষারোপ করিনি । বনভোজন বলে কথা। কথায় বলে শখের তোলা আশি টাকা।
এক সময় অপেক্ষার অবসান হলো। বনভোজনের দুটি বাস এসে থামলো। ্এতে পাবনা প্রেসক্লাবের সাংবাদিক এমজি বিপ্লব চৌধুরি, মাহফুজ আলম, সৈয়দ পাপুল, শাহিন রহমান, আরিফ আহমেদ সিদ্দিকী, শুশান্ত কুমার সরকার, মোখলেসুর রহমান খান বিপ্লব ও তাদের পরিবারের সদস্য বৃন্দ এবং অন্যান্য সাংবাদিক ও তাদের পরিবার বর্গ এলেন। পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ শিবজিত নাগ এবং তার পরিবারের সদস্যগণ এলেন একটি মাইক্রো বাসে।
বাসের সিটে বসতেই নাস্তার প্যাকেট ও পানির বোতল। অতীতকালে এমন আহামরি বনভোজনের কথা কল্পনাও করা যেতনা। তখন ছিলো পৌষ সংক্রান্তির দিনে গ্রামের ছেলে মেয়েরা একত্রিত হয়ে বাড়ি থেকে কোন নদীর কিনারে বা বন জঙ্গলের ধারে রান্না-বান্না করে কলার পাতায় একসঙ্গে বসে খাওয়-দাওয়া ও গল্প গুজব করতো। তাকে বলা হতো ‘পুষড়া’’ বা পুশুড়া । অঞ্চল ভেদে পুষলি, পুষালি বা পুষালু বলা হতো। কোন কোন এলাকায় এধরণের খাবার বা ভ্রমণের আয়োজনকে চড়ুইভাতি বলা হতো। বেশিরভাগ সময়ই পুষড়া বা পুশুড়া এবং চড়ুইভাতি বন কেন্দ্রিক হওয়ায় এর নাম ছিলো বনভোজন। দেশের বেশিরভাগ বনবাদাড় উজাড় হলেও বনভোজন শব্দের কোন হেরফের হয়নি। আরো শুদ্ধ করে ইংরেজি ধাঁচে যার নাম পিকনিক। যাক আমরা একসময় আমাদের কাঙ্খিত স্থান বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমি সারদাতে পৌঁছে গেলাম।
রাজশাহী শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার এবং চারঘাট উপজেলা পরিষদ হতে সামান্য দুরে পদ্মা নদীর তীরে অবস্থিত সারদা পুলিশ একাডেমি। পুলিশ অফিসারদের প্রশিক্ষণের লক্ষে বৃটিশ সরকারের আমলে এই সারদাকে বেছে নেওয়া হয়।
যতদুর জানা যায় ১৯১২ সালের জুলাই মাসে এই একাডেমির কাজ শুরু হয়। এক সময় এই স্থানটি ছিলো ওলন্দাজদের বাণিজ্য বসতি এবং পরে রবার্ট ওয়াটসন এন্ড কোম্পানির ব্যবসায়িক দপ্তর। যাবতীয় স্থাপনাসহ ১৪২.৬৬ একর এলাকা বেষ্টিত এই সম্পত্তি ১৯১০ সালে বৃটিশ সরকার মাত্র ২৫ হাজার টাকায় খরিদ করে। পুলিশ অফিসার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার লক্ষে মেজর এইচ চামনীর ওপর একাডেমি স্থাপনের দায়িত্ব অর্পণ করা হয়।
পুলিশ অফিসার প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হিসেবে প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে অবিভক্ত বাংলার বিভিন্ন প্রদেশসহ ভারত ব্রিটেন এবং আসামের বিভিন্ন পদমর্যাদার পুলিশ অফিসারগণ প্রশিক্ষণ নিতে শুরু করেন। ভারত বিভক্তির পর এই একাডেমি ছিলো পাকিস্তানের উভয় অংশের পুলিশ সার্ভিসে (পিএসসি) কর্মরত অফিসারদের প্রশিক্ষণের একমাত্র কেন্দ্রীয় প্রশিক্ষণ কেন্দ্র। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এই একাডেমি বাংলাদেশ পুলিশ বিভাগের সকল পদ মর্যাদার অফিসারদের প্রশিক্ষণের একমাত্র প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়।
পুর্বানুমতি সাপেক্ষে এই প্রতিষ্ঠানের একটি গেট দিয়ে একাডেমির পিকনিক স্পটে পৌঁছলাম। প্রতিবেশি বন্ধু রাষ্ট্র ভারতের উজানে ১৯৭৫ সালের ২১ এপ্রিল মুর্শিদাবাদ জেলায় ফারাক্কা বাঁধ চালু করার ফলে গঙ্গা বা পদ্মা নদী পানি প্রবাহে বাধাগ্রস্ত হয়ে তার যৌবন হারায়। এক কালের প্রমত্তা পদ্মা বর্তমানে যৌবন হারিয়ে ফেল্লেও তার সৌন্দর্য এখনো হারায়নি। বির্স্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ধু ধু বালুচর। তীর ঘেঁেষ গড়ে ওঠা পুলিশ একাডেমির পিকনিক স্পট। শত বর্ষের পুরাতন সারিবদ্ধ কড়ই গাছসহ অন্যান্য গাছ-গাছালিতে ভরপুর। পাখির কলকাকলিতে মুখরিত এই স্থানটিতে বাস থেকে নেমেই চোখে পড়ে একটি প্রকান্ড গেইট। গেইটে লেখা রয়েছে ‘‘ আপন হারা’’ সামনেই বাম দিকে খোদাই করে লেখা বিশ্ব কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একটি গানের কথা ‘‘ পুরানো সেই দিনের কথা ভুলবি কিরে হায়।/ ও সে চোখে দেখা, প্রাণের কথা, সে কি ভোলা যায়।/ আয় আরেকটি বার আয় রে সখা, প্রাণের মাঝে আয়।/ মোরা সুখের দুখের কথা কব, প্রাণ জুড়াবে তায়।’’ কোলাহল মুক্ত এমন সৌন্দর্যমন্ডিত নিরিবিলি স্থানে আমাদের ফ্যামিলি ডে ও বনভোজনের আয়োজন।
এক দিকে রান্না-বান্না, অন্য দিকে এক অপরের সঙ্গে গল্প-গুজব। তার সাথে আজকালের ফ্যাসান হিসেবে এনড্রয়েড মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় বিভিন্ন পোঁজে ছবি ওঠার ধুম। সেই সঙ্গে সেলফি তো আছেই। বিশেষ করে ট্রিপল হর্স, পর্যবেক্ষণ টাওয়ার, বিভিন্ন রাইড, নানা জাতের সৌরভিত ফুলের বাগান, ঝুলন্ত ব্রিজে এবং ব্রিজের আশে-পাশে ছবি ওঠা এবং তা ম্যাসেঞ্জারে পাঠিয়ে স্বজনদেরকে জানান দেওয়া। এছাড়া পাশেই বিশাল স্টেডিয়ামে পুলিশ বাহিনীর প্রশিক্ষণের মহড়া, ঘোড় সওয়ারের প্রশিক্ষণ মহড়া দেখে বেশ ভালোভাবেই সময় কেটে গেলো।
এরই মধ্যে প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্টোনিক মিডিয়ার খেলোয়াড়দের মধ্যে ১০ ওভারের ক্রিকেট খেলাও অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। পরিবারের নারী সদস্যদের জন্য বাজনা থামলে বালিশ কোথায়, শিশু-কিশোরদের জন্য দৌড় প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হলো।
খাবারের পরে নির্ধারিত মঞ্চে পুরুষ্কার বিতরণ ও র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হলো। এতে সভাপতিত্বকরেন পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সহ-সভাপতি সাংবাদিক আক্তারুজ্জামান আক্তার। প্রধান অতিথি হিসেবে পাবনা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি অধ্যক্ষ শিবজিত নাগ, বিশেষ অতিথি ছিলেন পাবনা প্রেসক্লাবের সদস্য সাংবাদিক ও নাট্য্যকার এইচ কে এম আবু বকর সিদ্দিক, প্রেসক্লাব সদস্য সাংবাদিক ও কলামিস্ট এবাদত আলী এবং সারদা পুলিশ একাডেমির সিকিউরিটি ওয়ান তারা মিয়া। সারদা পুলিশ একাডেমির প্রভাষক মনসুর আলী ও এল পি টু সিরাজুল ইসলাম প্রমুখ। পুরুস্কার বিতরণের পাশাপাশি অতিথিবৃন্দকে সন্মাননা প্রদান করা হলো।
সব শেষে বিদায়ের পালা। মাগরিবের নামাজ শেষে সব স্মৃতিকে পিছনে ফেলে নিজ বাড়ি অভিমুখে ফিরতি যাত্রা।
(লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট)।
জনপ্রয়
সর্বশেষ
- তাল পাড়ায় শিশুকে অমানবিক নির্যাতন
- জেলা শ্রম ক্রাইসিস প্রতিরোধ কমিটির ৯ম সভা অনুষ্ঠিত
- পাবিপ্রবিতে মাসব্যাপী বৃক্ষরোপণ কর্মসূচির উদ্বোধন
- স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর দাবিতে পাবিপ্রবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন
- ফরিদপুরে তিনদিনের ভূমি মেলা সম্পন্ন
- তারেক রহমানের ৩১ দফা বাস্তবায়নে কর্মী সমাবেশ অনুষ্ঠিত সাঁথিয়ায়
- চাঞ্চল্যকর পুলিশের চেকপোস্টে কর্তব্যরত কনস্টেবল হত্যার ক্লুলেস মামলার প্রধান আসামি নুর ইসলাম গ্রেফতার
- ১০ কেজি গাঁজাসহ ২ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার