এফএনএস বিদেশ : পাকিস্তানের লাহোরে অজ্ঞাত বন্দুকধারীদের গুলিতে নিহত হয়েছেন ওয়ান্টেড খালিস্তানি সন্ত্রাসী পরমজিৎ সিং পাঞ্জওয়ার। নিজ বাসভবনের কাছে গত শনিবার সকালে হাঁটার জন্য বের হলে বন্দুকধারীরা তাকে গুলি করে বলে জানিয়েছে পুলিশ। ৬৩ বছরের পাঞ্জওয়ার খালিস্তান কমান্ডো ফোর্স-পাঞ্জওয়ার গ্রুপের প্রধান ছিলেন। ২০২০ সালের জুলাইয়ে বেআইনি কার্যকলাপ (প্রতিরোধ) আইনের অধীনে ভারত তাকে সন্ত্রাসী হিসেবে চিহ্নিত করেছিল। পাকিস্তানের পাঞ্জাব পুলিশের এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা পিটিআইকে বলেছেন, গুলিতে পাঞ্জওয়ারের দেহরক্ষী আহত হয়েছিলেন। গতকাল রোববার তিনিও মারা যান। তিনি বলেন, ‘দেহরক্ষীকে নিয়ে লাহোরের জওহর টাউনের সান ফ্লাওয়ার হাউজিং সোসাইটির পার্কে হাঁটছিলেন পাঞ্জওয়ার। এ সময় দুই হামলাকারী তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে মোটরসাইকেলে করে পালিয়ে যায়’। আইএসআই, মিলিটারি ইন্টেলিজেন্স (এমআই) এবং কাউন্টার টেরোরিজম ডিপার্টমেন্ট (সিটিডি) সহ পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থাগুলো এলাকাটি ঘেরাও করে রেখেছে। তদন্তের খাতিরে ঘটনাস্থলে সংবাদমাধ্যমকেও ঢুকতে অনুমতি দেওয়া হয়নি। ভারতের বাইরে সন্ত্রাসবাদীদের লক্ষ্যবস্তু করার সর্বশেষ ঘটনা এই হত্যাকাণ্ড। চলতি বছরের ফেব্রুয়ারিতে সন্ত্রাসী সংগঠন হিজবুল মুজাহিদিনের স্বঘোষিত কমান্ডার বশির আহমেদ পিয়ার পাকিস্তানের রাওয়ালপিন্ডিতে অজ্ঞাতপরিচয় হামলাকারীদের গুলিতে নিহত হন। একই মাসে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন আলবদরের সাবেক কমান্ডার সৈয়দ খালিদ রাজা করাচিতে তার বাসভবনের বাইরে একইভাবে নিহত হন। এ সময়ে কাশ্মীরে জন্মগ্রহণকারী সন্ত্রাসী আইজাজ আহমেদ আহাঙ্গার ওরফে আবু উসমান আল-কাশ্মীরি আফগানিস্তানের কুনার প্রদেশে নিহত হন বলে জানা গেছে। তিনি মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক উদ্রবাদী সংগঠন আইএস-এ যোগ দিয়েছিলেন। গত শনিবার পাঞ্জওয়ারের ওপর হামলার বিষয়ে এক প্রত্যক্ষদর্শী তদন্তকারীদের বলেছেন, গত শনিবার ভোর ৬টার দিকে পাঞ্জওয়ার তার দেহরক্ষীর সঙ্গে যখন পার্কে ছিলেন, তখন এক বন্দুকধারী তাদের কাছাকাছি এসে গুলি চালায়। তিনি বলেন, ‘গুলি চালানোর পর আততায়ী সোসাইটির গেটে ছুটে যায়। সেখানে অপেক্ষারত এক সহযোগীকে নিয়ে তিনি পালিয়ে যান’। তদন্তকারীদের একটি সূত্র পিটিআইকে জানিয়েছে, আততায়ীরা এক সপ্তাহ ধরে পাঞ্জওয়ারকে অনুসরণ করছিলেন। সূত্রটি জানায়, খুনিদের সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছে গোয়েন্দারা। আততায়ী এবং এর পৃষ্ঠপোষকদের গ্রেপ্তারে গোয়েন্দা সংস্থার কয়েকটি দল গঠন করা হয়েছে। ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে লাহোর পুলিশের মুখপাত্র ফারহান আলী শেখ বলেন, ‘এই বিষয়ে এখন কোনো মন্তব্য করতে পারছি না’। পাঞ্জওয়ার ১৯৮৬ সালে কেসিএফ-এ যোগদান করেন। পরে তিনি এই দলটির নেতৃত্ব দেন এবং পাকিস্তানে চলে যান। ১৯৮৬ সালে কেসিএফের নেতৃত্বে ছিলেন সুখদেব সিং ওরফে সুখা শাপাই। তিনি তখন ভারতের পাঞ্জাবে পুলিশ কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৯ সালে সুখা শাপাই হোশিয়ারপুরের তান্ডায় পুলিশের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হন। তারপর অমৃতসরের সুলতানউইন্ডের কানওয়ারজিৎ সিং কেসিএফের প্রধান হন। তখন পরমজিৎ সিং পাঞ্জওয়ার ছিলেন এটির উপপ্রধান। কানওয়ারজিৎ সিং সুলতানবিন্দের মৃত্যুর পর পাঞ্জওয়ার কেসিএফের প্রধান হন। ১৯৯৫-৯৬ সালে পাকিস্তানে পালিয়ে যাওয়ার আগে পাঞ্জওয়ার পাঞ্জাবে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে জানিয়েছে সরকারি একটি সূত্র। সূত্র: এনডিটিভি, দ্য ডন